ভালোবাসা জানেনা বয়স - জাতি

 লেখকঃ Sharmistha Mukherjee 

ভালোবাসা জানেনা বয়স - জাতি

আমরা প্রায় সবসময় শুনে থাকি " ভালোবাসা হয়ে যায়, ভালোবাসা করা যায় না " অর্থাৎ " প্যায়ার কিয়া নেহি যাতা, হো যাতা হ্যায় " । তার সাথে এও শোনা যায় ভালোবাসা কোনোরকম বয়সের ফারাক, জাতিভেদ, ধর্মভেদ মানে না । ভালোবাসার কাছে সব বিভেদের প্রাচীর নিমেষেই দূর্বল হয়ে ভেঙে পড়ে । ভালোবাসা যে কোনো বয়সে , যে কোনো জাতি বা ধর্মের মানুষের সাথে হতেই পারে । It's quite natural . 


জাতি মানে হোলো যে হিন্দুর ঘরে জন্মায় সে হিন্দু , যে মুসলিম ঘরে জন্মায় সে মুসলিম , যে খ্রীষ্টান ঘরে জন্মায় সে খ্রীষ্টান আর যে শিখের ঘরে জন্মায় সে শিখ এই আর কি ! 

যদি লোকচক্ষুর আড়ালে কোনো হিন্দু ঘরের সদ্যোজাতকে মুসলিম বা অন্য ধর্মের ঘরে বা কোনো মুসলিম ঘরের সদ্যোজাতকে হিন্দু বা অন্য ধর্মের ঘরে চুপিসারে রেখে দেওয়া যায় তবে কিন্তু উভয় পরিবারের বোঝার ক্ষমতা নেই সদ্যোজাত কোন জাতের । কারণ সদ্যোজাত শিশুর পরিবার সূত্রে জাতের - ধর্মের পরিচয় আসে , দৈহিক সূত্রে আসে 

না । 


অপরদিকে ভালোবাসা বা প্রেমও দুই ধরনের - ১/ প্রাকৃতিক এবং ২/ সামাজিক । জাতি আর ধর্ম মানবসৃষ্ট যা শুধুই সমাজ মানে । 

জাতি আর ধর্ম প্রাকৃতিক বীজ অঙ্কুরিত নয় সমাজ সৃষ্ট । তাই শুধুমাত্র সামাজিক ভালোবাসা জাতি - ধর্ম এসব মানে কিন্তু প্রাকৃতিক প্রেম এসব না মেনে উন্মুক্ত হয়েই এগিয়ে চলে । 


প্রাকৃতিক প্রেম এমন এক বীজ যা রোপণ করে সযত্নে লালন পালন করলে একদিন বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয় । যার শাখা প্রশাখা

মাথা তুলে আকাশের সাথে কথা বলবে , যার ফুলের গন্ধ আর শোভা ছড়িয়ে পড়বে চারিদিকে । ফুলের শোভা বা গন্ধ কিন্তু হিন্দু - মুসলিম - খ্রিষ্টান - শিখ দেখে আলাদা আলাদা হয়ে তাদের সম্মুখে পৌঁছায় না । যেমন একটি গোলাপ ফুলের সুবাস হিন্দুর কাছে যেমন , মুসলিমের কাছে তেমন আবার খ্রীষ্টান বা শিখদের কাছেও একই । কারণ প্রকৃতি কখনোই হিন্দু - মুসলিম - খ্রীষ্টান - শিখ ইত্যাদি জাতিভেদ বা ধর্মভেদ বিচার করে না । অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যথা - ঝড়, বৃষ্টি, খরা, বন্যা, ভূমিকম্প ইত্যাদি আছড়ে পড়ার আগে কোনোরকম জাতি বা ধর্মভেদ করে না । কিন্তু সামাজিক প্রেম এইসব বিভেদে জর্জরিত, যাকে আর যাই হোক ভালোবাসা বা প্রেম বলা চলে না । 


প্রাকৃতিক প্রেমেরও একটা নিজস্ব সমাজ হতে পারে । এই সমাজ এমন এক বিশাল পরিবার হবে যার শরীর হবে শুধুই প্রেম গাঁথা , কিন্তু কোনো আপন পরের বিভেদ থাকবে না তাতে । প্রাকৃতিক প্রেমের নিজস্ব জাতি বা ধর্ম হবে যা কোনো অধিকারের লড়াই নয় , প্রেমেই পূর্ণতা পেয়ে জন্ম হবে আর প্রেমেই হবে মরণ । আমরা যারা গল্প - উপন্যাস - কবিতা ইত্যাদি লিখি তার মধ্যে কোনো জাতিভেদ বা ধর্মভেদ নেই । শুধুই আছে পাঠকবৃন্দ যারা জাতি - ধর্ম বিভেদ না করে সাদর অভ্যর্থনা জানান লেখকদের । 


Sex এর সম্বন্ধ শুধুই শরীরের সাথে । কিন্তু প্রেমের সম্বন্ধ শরীরকে ছাপিয়ে মনের গভীরে পৌঁছায় । এইজন্য ভাবনাপূর্ণ প্রেম বয়সের ফারাককেও অতিক্রম করে যায় । প্রেম বা ভালোবাসা বয়স মেনে হয় না , তা ষোলোতে যেমন আবার ষাটেও তেমনি সরস থাকতে পারে । প্রেমের যাত্রাপথ ভাব দ্বারা পূর্ণতা পায় । একজন নারী বা পুরুষ কৈশোর থেকে যৌবন আবার যৌবন থেকে বার্ধক্যেও

একই প্রেম ধারায় বইতে পারে । কথায় বলে যে প্রেম বা ভালোবাসা আত্মার বন্ধনে বাঁধা তারা জন্ম - জন্মান্তর একই বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে পারে । যদিও জন্মান্তর আছে কিনা জানি না , পরবর্তী জন্ম হয় কিনা জানি না তবুও ভালোবাসার আত্মিক বিশ্বাস প্রেমের পথকে আরো মসৃণ করতে সক্ষম । 


যে সকল মানুষ শুধুমাত্র Sex অর্থাৎ সম্ভোগকে প্রেম ভাবে তাদের ক্ষেত্রে বয়সের পার্থক্যকে গুরুত্ব দেওয়া খুবই স্বাভাবিক । কারণ একটা বিশেষ বয়সে উপনীত হওয়ার পর শারীরিক চাহিদা নির্লিপ্ত হয়ে যায় । কিন্তু যদি শারীরিক চাহিদাকে উপেক্ষা করে প্রেমকে গুরুত্ব দেওয়া যায় তাহলে মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত তা অক্ষুণ্ন থাকতে পারে । তাই প্রাকৃতিক প্রেমে বয়সের ফারাক প্রভাব বিস্তার করতে পারে না । সেথায় সব বয়সি প্রেমের বয়স আর সব ঋতুই প্রেমের ঋতু হয়ে যায় । 

You may like these posts